ফ্যাশন পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে স্টাইল চেঞ্জ হয়। আর নিজেকে নতুনভাবে নানা পোশাকে সাজাতে সবাই পছন্দ করেন। এই আবহাওয়ায় ওয়ান পিস কুর্তি অত্যন্ত আরামদায়ক পোশাক। তরুণীদের মধ্যে তাই এটা বেশ পছন্দের পোশাক। বর্তমানে নানা স্টাইলের কুর্তির চলন সবচেয়ে বেশি। হালফ্যাশনে ফ্যাশন হাউসগুলোর স্টাইলিশ কুর্তির কালেকশন নিয়ে লিখেছেন এমি জান্নাত।
ফ্যাশন হাউসগুলো সব সময় পোশাকে ট্রেন্ডি লুক রাখার চেষ্টা করে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। এবারের কুর্তির স্টাইল নিয়ে কথা হয় ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে। ফ্যাশন হাউস সারা’র ডিজাইনার শামীম রহমান বলেন, গরমে আমরা কুর্তিতে সুতি এবং জর্জেট দুটো ফেব্রিকই ব্যবহার করেছি। এখানে লং, শর্ট, মিড লেভেল কুর্তি, ডাবল লেয়ার কুর্তিতে বিভিন্ন ডিজাইন করা হয়েছে। রঙ হিসেবে হালকা যেমন ইয়েলো, লেমন ইয়েলো, অফ হোয়াইট এগুলো ব্যবহার করেছি। শর্টসিøভ এবং ফুলসিøভ পোশাক রয়েছে। গলায় ব্যান্ড কলার, ভি নেক এবং রাউন্ড নেক রয়েছে। তবে রাউন্ড নেকটাই বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি ড্রেসে কাজের ভিন্নতা রয়েছে। এমব্রয়ডারি, প্রিন্ট, এমব্লিশমেন্ট, কারচুপি এরকম বিভিন্ন কাজের মধ্যে কুর্তিগুলো ডিজাইন করা হয়েছে।
রঙ বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাস জানান, সিঙ্গেল কামিজ বা কুর্তির ক্ষেত্রে সব সময় সুতিকাপড়কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। গরমের জন্য আমরা মেয়েদের সিঙ্গেল কামিজ ও কুর্তিতে গার্মেন্টসের কিছু ফ্যাব্রিক- সুতি, লিনেন, তাঁত- এগুলো ব্যবহার করেছি। পোশাকগুলো করা হয়েছে সেমিস্টাইলে অর্থাৎ খুব লম্বা নয় আবার একেবারে শর্টও নয়। ফিউশন কাট, কিছুটা রাউন্ড ও শার্ট স্টাইলে করা হয়েছে কিছু পোশাক। তবে সেগুলোর মধ্যে কিছু লম্বা কামিজও রয়েছে- যেগুলোয় ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, এমব্রয়ডারির ইয়োক ব্যবহার করা হয়েছে। আর রঙের ক্ষেত্রে অফহোয়াইট, পেস্ট, হালকা কমলা, নীল, লেমন, পিংক- এগুলো প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
লারিভের ফ্যাশন ডিজাইনার আফরিনা হাবিব মুনমুন বলেন, হালফ্যাশনে বেশ কয়েক বছর ধরেই সিঙ্গেল কামিজ ও কুর্তি এখন মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে। গরমের সময় আরামের ব্যাপারটাকে প্রাধান্য দিয়েই আমাদের পোশাকগুলো তৈরি করা হয়। তবে কখনো বৃষ্টি হচ্ছে আবার রোদ। গরমের সঙ্গে সঙ্গে হালকা শীতও অনুভূত হয় মাঝে মধ্যে। তাই আমরা একটু ঢিলেঢালা আরামদায়ক সিঙ্গেল কামিজ, কুর্তি, টপস, টিউনিকের পাশাপাশি হালকা শীতে পরার মতো পোশাকও রেখেছি মেয়েদের জন্য। ফ্যাব্রিক হিসেবে সুতি, ভিসকস, জর্জেট ব্যবহার করা হয়েছে। প্যাটার্নের ক্ষেত্রে এসামেট্রিক, ফিস কাট, শার্ট স্টাইলের সিঙ্গেল কামিজ ও টিউনিক রয়েছে। এগুলোর মধ্যে হালকা প্রিন্ট ও এমব্রয়ডারি করা হয়েছে। আর উজ্জ্বল হলেও হালকা রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে অনুষ্ঠান বা পার্টির জন্য মসলিনের ওপর কাজ করা কিছু গর্জিয়াস কামিজ ও কুর্তি রয়েছে। সাধারণত সন্ধ্যা বা রাতেই আমরা কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। তাই এ ক্ষেত্রে পোশাকগুলো একটু গর্জিয়াস ও রঙিন করা হয়েছে।
সিঙ্গেল কামিজ বা কুর্তির বড় সুবিধা হলো, এর সঙ্গে ম্যাচিং সালোয়ার প্রয়োজন নেই। এর সঙ্গে অনায়াসেই জিন্স, লেগিন্স বেশ মানিয়ে যায়। লম্বা সিঙ্গেল কামিজের সঙ্গে পালাজ্জো, লেগিন্স- দুটোই পরতে পারে মেয়েরা। এখন এর সঙ্গে কটির ট্রেন্ডও এসেছে। তাই শর্ট ওড়না ছাড়াও কুর্তির কটি পরলে স্মার্ট লাগে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে দেখা যায় বটমে ইউভি, বোট কাটিং, রাউন্ড, চওড়া বা স্ট্রেইট প্যাটার্ন, বাটারফ্লাই ইত্যাদি ডিজাইনের সিঙ্গেল কামিজ। হাতার ডিজাইনে ঢিলেঢালা, কার্ভ স্লিভ, বেল স্লিভ লক্ষ করা যায়। গলার ডিজাইনে থাকে সেমিবোট নেক, ইউভি, পোর্ট্রেট, জুয়েল, স্কয়ার, গেদার্ড নেক, সেট ইন স্লিভ নেকের মতো প্যাটার্ন। কুর্তিতে এমব্রয়ডারি ও প্রিন্টের কাজ খুব বেশি জমকালো হলে ভালো লাগে না। এ ক্ষেত্রে হালকা কাজই স্মার্ট লুক এনে দেয়। সারা, ইউনিক্লো, বিয়ন্ড, সাদাকালো, অঞ্জন’স, কে ক্র্যাফটসহ অনেক ব্র্যান্ডে পেয়ে যাবেন পছন্দের সিঙ্গেল কামিজ বা কুর্তি।
বর্তমান ফ্যাশন ট্রেন্ড অনুযায়ী হালকা রঙের সুতি, লিনেন, খাদি কাপড়ে তৈরি হচ্ছে নকশাদার স্লিভলেস বা কম দৈর্ঘ্যরে হাতার কামিজ আর কুর্তি। বিভিন্ন অনলাইন শপেও এগুলো সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাওয়া যাচ্ছে। কুর্তির ক্যানভাসে নকশা করা হচ্ছে হ্যান্ডপেইন্ট, কারচুপি, স্ক্রিন প্রিন্ট, এমব্রয়ডারি, স্প্রে, সিকুইনসহ নানা মাধ্যম। এগুলোর সঙ্গে ম্যাচিং করে বা ম্যাচিং ছাড়াও পরা যাবে। আর এমব্রয়ডারি বা প্রিন্ট বেজের সঙ্গে ওড়না কিংবা লেগিন্স কন্ট্রাস্ট করা সহজ। তাই এ রকম কুর্তি কামিজের সঙ্গে পছন্দসই যে কোনো জিন্স, লেগিংস, জেগিংস, পালাজ্জো অথবা ফ্যাশনেবল সালোয়ার পরতে পারেন তরুণীরা।
Leave a Reply